-জসীম উদ্দিন
আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশিথাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরেব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।
0 Comments