মাঝি


মাঝি 
                                   ----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

আমার যেতে ইচ্ছে করে 
নদীটির ওই পারে 
যেথায় ধারে ধারে
বাঁশের খোঁটায় ডিঙ্গি নৌকায়
বাধা সারে সারে।
কৃষানেরা পার হয়ে যায় 
লাঙ্গল কাঁধে ফেলে
জাল টেনে নেয় জেলে,
গরু মহিস সাঁতারে নিয়ে 
যায় রাখালের ছেলে।  
সন্ধ্যা হলে সেখান থেকে
সবাই ফেরে ঘরে,
শুধু রাত দুপুরে 
শেয়াল গুলো ডেকে ওঠে 
ঝাউ ডাঙাটার পরে। 
মা যদি হও রাজি,
বড় হলে আমি হব 
খেয়াঘাটের মাঝি। 

শুনেছি ওর ভিতর দিকে
আছে জলার মতো।
বর্ষা হলে গত
ঝাঁকে ঝাঁকে আসে সেথায়
চখাচখী যত।
তারি ধারে ঘন হয়ে
জন্মেছে সব শর;
মানিক-জোড়ের ঘর,
কাদাখোঁচা পায়ের চিহ্ন
আঁকে পাঁকের 'পর।
সন্ধ্যা হলে কত দিন মা,
দাঁড়িয়ে ছাদের কোণে
দেখেছি একমনে...
চাঁদের আলো লুটিয়ে পড়ে
সাদা কাশের বনে।
মা, যদি হও রাজি,
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।
এ-পার ও-পার দুই পারেতেই
যাব নৌকো বেয়ে।
যত ছেলেমেয়ে
স্নানের ঘাটে থেকে আমায়
দেখবে চেয়ে চেয়ে।
সূর্য যখন উঠবে মাথায়
অনেক বেলা হলে ..
আসব তখন চলে
বড়ো খিদে পেয়েছে গো ..
খেতে দাও মা' বলে।
আবার আমি আসব ফিরে
আঁধার হলে সাঁঝে
তোমার ঘরের মাঝে।
বাবার মতো যাব না মা;
বিদেশ কোন্‌ কাজে।
মা, যদি হও রাজি;
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।


( শিশুকাব্য)



Post a Comment

0 Comments